সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:বরিশাল বিশ্ববিদ্য্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ছুটির জন্য আবেদন করেছেন। শিক্ষার্থীদের টানা ১৭ দিনের আন্দোলনের মুখে ১৫ দিনের ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও উপাচার্য ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটির আবেদন করেছেন। তার পরও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন থেকে পিছু হটছে না। আন্দোলনকারীরা বলছে, উপাচার্যের চার বছরের মেয়াদ দুই মাস পরে শেষ হচ্ছে। তাই পদত্যাগের বিকল্প হিসেবে উপাচার্য দুই মাসের ছুটিতে যেতে পারেন। কিন্তু সেটি না করে তিনি ১৫ দিনের ছুটি চেয়েছেন। যেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছে না। তাই উপাচার্যের পদত্যাগের পাশাপাশি তাঁকেসহ কমপক্ষে তিনজনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদনে জানানো হয়, উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ১৫ দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন। ১১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উপাচার্যের ছুটি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রুটিন কাজ করবেন। ২৬ এপ্রিল উপাচার্য কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ১৫ দিনের ছুটিতে যাওয়ার বিষয় প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, আগামী ২৮ মে কর্মমেয়াদ শেষ পর্যন্ত তাঁকে ছুটিতে যেতে হবে, না হয় গদি ছাড়তে হবে। আন্দোলনকারীদের নেতা লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমরা চেয়েছি উপাচার্যের পদত্যাগ। কিন্তু সেটি না করে শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করে তিনি ১৫ দিনের ছুটি চেয়েছেন। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
উপাচার্যসহ তিনজনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা : গতকাল বৃহস্পতিবার ধারাবাহিক সড়ক অবরোধ চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক, রেজিস্ট্রার ড. মো হাসিনুর রহমান এবং গণসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ রুমিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। আন্দোলনকারীরা জানায়, উপাচার্যের সব অপকর্মের পেছনে প্রকাশ্য ও গোপনে সহয়তা দিয়েছেন ড. মো. হাসিনুর রহমান ও ফয়সাল রুমি। এই তিনজন ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীরা যেকোনো মূল্যে তাঁদের প্রতিহত করবে।
শিক্ষকদের একাংশের অবস্থান ধর্মঘট : পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আট দফা দাবিতে গতকাল শিক্ষকরা অবস্থান ধর্মঘট করছেন। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক স?মিতির একাংশ ধর্মঘট পালন করে।
সড়ক অবরোধ : উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গতকালও সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কের অবস্থানের আগে শিক্ষার্থীরা যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কারণে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জন্য একাডেমি ভবনের সামনে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটাসহ পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলার সঙ্গে সড়কপথে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহীসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হ?য়ে যায়।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে উপাচার্যের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে গত ২৭ মার্চ থেকে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য তাঁর একক ক্ষমতাবলে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এবং আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেন। এতে আরো ক্ষুুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা ১০ দফা বাদ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
Leave a Reply